শুধুমাত্র বিজেপির নয়, রাহুল গান্ধীরও প্রতিপক্ষ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
এতদিন গান্ধী পরিবারের একজন ছিলেন, এখন দলে এক নম্বর হওয়ার দাবিদার দু'জন
- Total Shares
১৯৯৯ সালে কর্নাটকের বেলারি আসনটি থেকে অন্যতম কঠিন প্রতিদ্বন্ধি সুষুমা স্বরাজের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী।
চুলের সিঁথির মাঝখানে বড় একটা টিপ - সুষমাকে দেখে একেবারে একজন সত্যিকারের ভারতীয় নারী বলে মনে হচ্ছিল। উল্টোদিকে, সোনিয়াকে 'ইতালীয় মহিলা' বলে প্রচার করে চলছিল বিজেপি। একদিকে, কন্নড় ভাষায় কথা বলে ভোটারদের মন জয় করবার চেষ্টা করছিলেন স্বরাজ। উল্টোদিকে, সোনিয়া ঠিক মতো হিন্দিও বলতে পারছিলেন না।
আর, ঠিক এই পরিস্থিতিতে মঞ্চে আবির্ভূত হলেন ২৭ বছরের প্রিয়াঙ্কা।
মায়ের সঙ্গে জনসভায় এসেই দর্শকদের উদ্দেশ্যে কন্নড় ভাষায় কথা বললেন তিনি। পুরো বক্তৃতা কন্নড়ে না দিলেও, বক্তৃতার ফাঁকে একটি কী দু'টি বাক্য তিনি কন্নড়ে বললেন। অনেকেরেই জানা রয়েছে, সে সময়ে, মায়ের জয়ে নিশ্চিত করতে পর্দার আড়ালে তিনি নিজেকে বিশেষভাবে তৈরি করেছিলেন। শুধুমাত্র প্রিয়াঙ্কার কথা বলার ধরণ নয়, প্রিয়াঙ্কার বক্তৃতার বিষয়বস্তুগুলোও মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছিল।
ফলও হাতেনাতে পাওয়া গিয়েছিল। নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল সোনিয়া।
তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ, কংগ্রেসকর্মীরা বুঝেছিল যে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মতো একজন নেতা তাদের একান্ত প্রয়োজনীয়।
বহুদিন ধরেই মায়ের নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্ব সামলিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা [ছবি: পিটিআই]
'তিনি কি সরকারি ভাবে দলে যোগ দেবেন? 'কবে যোগ দেবেন?' - এই ধরণের ফিসফাস দলের অন্দরমহলে শুরু হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে, ২৩জানুয়ারী, সেই ফিসফাসের অবসান ঘটল যখন সরকারিভাবে কংগ্রেস প্রয়াংকাকে দলের পূর্ব উত্তরপ্রদেশের সাধারণ সচিব পদে মনোনীত করল।
কংগ্রেসের কাছে এখন আর তিনি শুধুই সোনিয়া বা রাহুলের নির্বাচনী প্রচারক নন। তিনি সরকারিভাবে এখন তাঁর মা ও দাদার সঙ্গে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের অংশ।
সোনিয়া গান্ধী ইতিমধ্যেই রাহুলকে সর্বভারতীয় সভাপতি করে দলের শাসনভার রাহুলের হাতে তুলে দিয়েছেন। তিনি নিজের জন্য শুধুমাত্র ইউপিএ চেয়ারপারসন পদটি রেখেছেন। এই মুহূর্তেই তিনি শুধুমাত্র রাহুলের পদপ্রদর্শকের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে এর চাইতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা বন্টন ব্যবস্থা মেলা দুষ্কর ছিল।
সরকারিভাবে দলে যোগ দিক প্রিয়াঙ্কা, এ দাবি কংগ্রেস কর্মীদের বহুদিনের [ছবি: পিটিআই]
কিন্তু, কংগ্রেস হাইকম্যান্ডে প্রিয়াঙ্কার আগমন কি পরিস্থিতি পরিবর্তন ঘটাতে পারে?
প্রিয়াঙ্কার কংগ্রেসে যোগদান যদি শুধুমাত্র প্রতীকী হয়ে থাকে তাহলে যে কংগ্রেসকর্মীরা একজন দক্ষ নেতা পাওয়ার আশায় প্রিয়াঙ্কার হয়ে সুপারিশ করেছিল তারা কীন্তু খুশি হবে না। এই শ্রেণীর কর্মীরা কিন্তু প্রিয়াঙ্কার কাছ থেকেই পরমার্শ চাইবে এবং প্রিয়াঙ্কাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দাবি করতেই থাকবে।
প্রিয়াঙ্কার এই অন্তর্ভুক্তি দেখে দলীয় কর্মীরা কোথাও যেন একটা ক্ষমতার গন্ধ পাচ্ছে। এমনিতেই কংগ্রেস দলে গান্ধী পরিবারের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কেউ নেই। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা দলে যোগ দেওয়ার পর কংগ্রেস কর্মীদের সামনে এখন দু'জনের মধ্যে একজনকে পছন্দ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে - রাহুল কিংবা প্রিয়াঙ্কা?
এতদিন যেখানে গান্ধী পরিবারের একজন ছিলেন, এখন সেখানে দু'জন।
বহু কংগ্রেসকর্মী রাহুলের থেকেও প্রিয়াঙ্কাকে বড় রাজনীতিবিদ মনে করে [ছবি: পিটিআই]
দেখতে অনেকটা এক বলে ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর তুলনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলা যায় যে প্রিয়াঙ্কা কিন্তু এবার রাজনীতিতে থাকতে এসেছেন।
আঞ্চলিক দলগুলো নেতা নেত্রীরা ইতিমধ্যেই নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করার চেষ্টা করে চলেছেন। তাঁদের হাবেভাবে একটি বিষয় পরিষ্কার - তাঁরা কেউই রাহুল গান্ধীকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিচ্ছেন না। প্রিয়াঙ্কা দলে যোগ দেওয়ার ফলে রাহুলের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠার চ্যলেঞ্জ কিন্তু আরও বড় হল।
এতদিন দলের বাইরের চ্যালেঞ্জটা সামলাতে হতে রাহুলকে। কিন্তু এখন দলের অন্দর থেকেও চ্যালেঞ্জ আসার সম্ভাবনা প্রবল।
নরেন্দ্র মোদীর জাতীয় মঞ্চে উত্থান কিন্তু দলের ক্যাডারদের সমর্থনের জোরে। এই উত্থান স্বয়ং অটল বিহারী বাজপেয়ীও ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
মোদীর উত্থান রুখতে পারেননি স্বয়ং অটল বিহারী বাজপেয়ী [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
এ রকম নয় যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য মোদী মরিয়া ছিলেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে পরিণত করতে দলীয় ক্যাডাররা উঠে পড়ে লেগেছিল। বিজেপি কর্মীরা বুঝতে পেরেছিল যে মোদীর ব্যক্তিত্ব তাদের ফের ক্ষমতায় নিয়ে আসতে পারবে।
প্রিয়াঙ্কা নিজেও কংগ্রেসের 'এক নম্বর' হয়ে উঠতে মরিয়া নন। কিন্তু এক শ্রেণীর কংগ্রেস কর্মীরা যে এই দাবি তুলে ধরবে তা হলফ করেই বলা চলে।
এবং কেন নয়?
ত্রিশঙ্কু লোকসভা হলে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকেই সব বেশিচেযে করে প্রয়োজন পড়বে কংগ্রেসের।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনিই যে রাহুল গান্ধীর সবচেযে বড় প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে চলেছেন তা হলফ করেই বলা যায়।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে