কোনও অখেলোয়াড় সুলভ আচরণ নয়, অশ্বিন নিজের ক্রিকেট বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন

দ্রুত রান নেওয়ার স্ট্রাটেজি হিসাবে ক্রিজের বাইরে দাঁড়ানো বাটলারের বহুদিনের অভ্যাস

 |  4-minute read |   26-03-2019
  • Total Shares

কলেজ জীবনের একটি ইন্টার-ক্লাস ম্যাচের কথা মনে পড়ে গেল।

২৫ ওভারে ১৩৮ রান তাড়া করতে নেমে আমরা আট উইকেট হারিয়ে তখন ৯৭ রান তুলে ছিলাম, ২০.৫ ওভারে। অর্থাৎ জয়ের জন্য তখনও ২৫ বলে ৪১ রান প্রয়োজন ছিল। হাতে মাত্র দু'উইকেট। ক্রিজে ব্যাট করছিল দলের পাঁচ নম্বর ব্যাটসম্যান। উল্টোদিকে, নন-স্ট্রাইকার এন্ডে দলের নয় নম্বর ব্যাটসম্যান। বিপক্ষ দলের অফস্পিনার শেষ বলটি করতে যাওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে থমকে দাঁড়ালেন। নন-স্ট্রাইকার প্রান্তের ব্যাটসম্যান তখন ক্রিজ ছেড়ে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে। অফস্পিনার অবশ্য বল উইকেটে ঠেকাল না। শুধুমাত্র ব্যাটসম্যানকে সাবধান করে দিয়ে আবার বোলিং রান-আপে ফিরে গেল।

পরের দিন কলেজ ক্যান্টিনে সেই অফস্পিনারের স্পোর্টস ম্যান স্পিরিট নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। আলোচনা মানে, আলোচনায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেই বলছিল যে সেই পরিস্থিতিতে সে থাকলে কী করত। দেখা গেল, অধিকাংশেরই মত ক্রিকেটে স্পোর্টসম্যানশিপটাই আসল। এবং সে ক্ষেত্রে অফস্পিনারটি একদম ঠিক কাজ করেছে, ক্রিকেটের মর্যাদাহানি হতে দেয়নি।

আমার মতো যারা সে সময় অফস্পিনারের বিরুদ্ধে কথা বলে ছিল তাদের দু'টি যুক্তি ছিল। তাদের মনে হয়েছিল অফস্পিনারের এহেন ব্যবহারের সঙ্গে স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের কোনও সম্পর্ক নেই। বরঞ্চ আউট না করে বোলার ভুল কাজ করেছিলেন। ম্যাচটি হেরে গেলে (যদিও সেই ম্যাচটি তারা জিতেছিল) বোলারটি কিন্তু আদতে নিজের দলের সঙ্গে 'বেইমানি' করত।

body_032619065900.jpgবাটলারের রান আউট নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন অশ্বিন [সৌজন্যে: বিসিসিআই]

কেন আমাদের মনে হয়েছিল যে বোলারের এই আচরণের সঙ্গে স্পোর্টসম্যানশিপের কোনও সম্পর্ক নেই?

তার উত্তর পেতে গেলে দেখতে হবে কোন পরিস্থিতিতে নন-স্ট্রাইকার প্রান্তের ব্যাটসম্যান সেদিন ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি দলের ন'নম্বর ব্যাটসম্যান। আদতে ব্যাটসম্যান নন, দলের অন্যতম পেস বোলার। উল্টোদিকে দলের পাঁচ নম্বর ব্যাটসম্যান রয়েছেন, যাঁকে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান বলা যেতে পারে। ওভারের শেষ বল হচ্ছিল। ব্যাটসম্যান নিজেও পপিং ক্রিজ থেকে কিছুটা বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন। নন-স্ট্রাইকার প্রান্তের ব্যাটসম্যানও আগে থেকে ক্রিজের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। যাতে দ্রুত এক রান সম্পন্ন করা যায়।

লক্ষটা বেশ পরিষ্কার ছিল। শেষ বলে এক রান যেনতেন প্রকারে নিতেই হবে। যাতে পরের ওভারের প্রথম বলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাটসম্যানকে (নয় নম্বর ব্যাটসম্যানকে) স্ট্রাইকে না থাকতে হয়। তার মানে, ব্যাটিং দল স্ট্রাটেজি নির্ভর ক্রিকেট খেলছিল। দলের স্বার্থে যেচে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন নন স্ট্রাইকার প্রান্তের ব্যাটসম্যান। তাহলে বিপক্ষ দলের বোলার কেন খামোকা তাঁকে তোয়াজ করতে যাবেন?

ক্রিকেটের স্পোর্টিং স্পিরিট অক্ষুণ্ণ থাকত, বা থাকার প্রশ্ন উঠত, যদি এটা কোনও অনিচ্ছাকৃত ভুল হত। কিন্তু একজন ব্যাটসম্যান যখন স্ট্রাটেজির অঙ্গ হিসেবে নিজে থেকেই ক্রিজের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছেন তখন বিপক্ষের বোলার তাঁকে আউট করলে স্পোর্টসম্যান স্পিরিট নষ্ট হতে যাবে কেন? বরঞ্চ, সেই পরিস্থিতিতে ব্যাটসম্যানরা এই পদক্ষেপ করতে পারেন -- সে বিষয়ে সতর্ক থেকে বোলার তো নিজের ক্রিকেট বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন, তার জন্য তো তাঁর বাহবা প্রাপ্ত।

আমাদের দ্বিতীয় একটি যুক্তি ছিল। সন্দেহ বলতে পারেন। সেই ম্যাচের তখনকার পরিস্থিতি যা ছিল তাতে ব্যাটিং দলের জয়ের সম্ভাবনা খুবই কম ছিল (শেষ পর্যন্ত ২১ রানে হেরেও ছিল)। কিন্তু তখনকার পরিস্থিতি যদি ব্যাটিং দলের অনুকূলে থাকত তখন সেই বোলারটি কী করত। আমার স্থির বিশ্বাস স্পোর্টসম্যাশিপের কথা তখন আর তার মাথায় আসত না।

এই মানকাডেড নিয়মে রাজস্থান রয়্যালসের ওপেনার জোস বাটলারকে সোমবার আউট করেছেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন। তা নিয়ে বেশ বিতর্কও চলছে। কিন্তু অশ্বিন কি সত্যিই কোনও অখেলোয়াড়ি মনোভাব দেখিয়েছেন?

মনে তো হয় না। প্রথমত আউটটা ক্রিকেটের নিয়ম মেনেই হয়েছে। কোনও খেলোয়াড় যদি ক্রিকেটের নিয়ম মেনে কোনও কাজ করে থাকেন তাহলে তা অখেলোয়াড়ি মনোভাব হতে যাবে কেন?

দুই, জোস বাটলার যে অনিচ্ছাকৃত ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। উল্টোদিকে তখন সঞ্জু স্যামসন ব্যাট করছিলেন। আর নন-স্ট্রাইকার এন্ডে দুরন্ত ছন্দে ছিলেন জোস বাটলার। মাত্র ৪৩ বলে ৬৯ রান তুলে ফেলেছিলেন। ব্যাটিং প্রান্তে যাওয়ার 'লোভে' পড়ে তিনি ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যাতে দ্রুত অপর প্রান্তে পৌঁছে ব্যাট করতে পারেন। তিনি যদি স্ট্রাটেজির অঙ্গ হিসেবে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন, তাহলে সামান্যতম সুযোগ পেয়ে বিপক্ষের ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যানকে আউট করতে অশ্বিন কেন পিছপা হবেন? সেই সময়ে বাটলার যে ছন্দে ছিলেন তিনি একার হাতে ম্যাচ বের করে নিতে পারতেন।

তা ছাড়া বাটলারের এই কাণ্ড বা এই ভাবে আউট হওয়া এই প্রথম নয়। এর আগে শ্রীলঙ্কার পেস বোলার লাহিরু থিরিমান্নে তাঁকে এই ভাবে আউট করেছিলেন। একটি ওভারে সতর্ক করে দেওয়ার পরে পরের ওভারে তাঁকে আউট করেছিলেন শ্রীলঙ্কার অফস্পিনার। অর্থাৎ, এই ভাবে বিপক্ষ দলকে (পড়ুন বোলারকে) 'ফাঁকি' দিয়ে রান তোলার স্বভাব বাটলারবের রয়েছে।

বিপক্ষ দলের সেরা ব্যাটসম্যানের এই প্রবণতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন অশ্বিন। সঠিক সময়ে তিনি সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বাটলারকে আউটও করেন। কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ম্যাচটি জিতেও যায়।

অখেলোয়াড়ি আচরণের জন্য সমালোচনা নয়, বরঞ্চ ক্রিকেট বুদ্ধির জন্য প্রশংসা প্রাপ্য অশ্বিনের।

না, চেন্নাইয়ের অফ স্পিনারের জন্য ক্রিকেট খেলাটি কলঙ্কিত হয়নি। বরঞ্চ, ক্রিকেট খেলতে কতটা তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রয়োজন তারই প্রমান তিনি করেছেন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ARPIT BASU ARPIT BASU @virusfound007

Arpit Basu is the Special Correspondent with the India Today Group’s fact check team. With more than one-and-a-half decade's experience in print and digital media, he has reported on aviation, transport, crime, civic and human interests issues. His sting operation on how precious Aviation Turbine Fuel, meant for Kolkata airport, was pilfered and sold in local market as ‘white kerosene’ received widespread acclaim. Arpit has worked with reputed media houses like The Times of India and Hindustan Times and had received letter of appreciation for reporting during the Phalin cyclone in Odisha in 2013.

Comment