আইপিএলে অশ্বিনের মানকাডিং: লোকে কেন স্পোর্টসম্যান স্পিরিট নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে

শেন ওয়ার্নের অশ্বিনকে নিয়ে সমালোচনা সত্যিই হাস্যকর, তিনি নিজেই তো বহু বিতর্কের জনক

 |  3-minute read |   27-03-2019
  • Total Shares

আগের একটি প্রতিবেদনে আমি লিখেছিলাম - ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা, কিন্তু সব ভদ্রলোকেরা গেল কোথায়?

পারথ টেস্ট চলাকালীন যখন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক টিম পেনের মধ্যে চলতে থাকা স্লেজিং ঘিরে তীব্র বাদানুবাদের সৃষ্টি হয় তখন আমার সেই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু, আইপিএল সিজেনে তো পটভূমিকার পরিবর্তন ঘটে। একই সঙ্গে, নিয়মগুলোও বদলে যায়।

body1_032719095326.jpgঅস্ট্রেলিয়াতে বিরাট কোহলি ও টিম পেনের মধ্যে স্লেজিং ঘিরে তীব্র বাদানুবাদের সৃষ্টি হয় [ছবি: রয়টার্স]

রাজস্থান রয়্যালস কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে তাদেরআইপিএল ২০১৯ অভিযান শুরু করেছিল। পাঞ্জাব অধিনায়ক রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সামনে টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দল রাজস্থান রয়্যালস। তাই তো বিনোদন দেওয়া ছাড়াও এই ম্যাচটিতে দর্শকদের জন্য আরও অনেক কিছুই অপেক্ষা করে ছিল। প্রতিক্রিয়া, পাল্টা প্রতিক্রিয়া এবং সর্বোপরি মানকাডিং।

রাজস্থান রয়্যালস বনাম কিংস ইলেভেন ম্যাচটিতে ঠিক কি হয়েছিল তা একবার দেখে নেওয়া যাক।

বল করতে যাওয়ার আগে অশ্বিন বুঝতে পেরেছিলেন যে ক্রিজ ছেড়ে বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন জোস বাটলার। তাই, ডেলিভারি করতে যাওয়ার ঠিক পূর্ব মুহর্তে তিনি দাঁড়িয়ে পড়ে নন-স্ট্রাইকার প্রান্তের উইকেটের বেল ফেলে দিয়েছিলেন। ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন বাটলার। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেল উইকেটের বেল পড়ার সময়ে বাটলার ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি। এই ধরণের রান আউটকে 'মানকাডিং' বলা হয়ে থাকে।

মানকাডিং বস্তুটি ঠিক কী? ক্রিকেটের পরিভাষায় তা জায়গা পেলই বা কী করে? ১৯৪৭-৪৮ মরশুমের ঘটনা। ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে বিনু মাঁকড়কে ঘিরে একটি বিতর্কের সৃষ্টি হল। বল করতে যাওয়ার সময়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে নন-স্ট্রাইকার প্রান্তের বেল সরিয়ে দিয়ে তিনি বিল ব্রাউনকে রান আউট করেছিলেন। এই রান আউটটি কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে বিতর্কের ঝড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। এবং, এখান থেকেই ক্রিকেটে 'মানকাডিং'-এর সূচনা হল।

এখন বিতর্কের বিষয়টি হল - এই ধরণের রান আউট কি আইনসম্মত, নাকি এই ধরণের আউট ক্রিকেট আইনভঙ্গ করে? অনেকেই মনে করেন, এ ভাবে রান আউট করা মানে অখেলোয়াড়ি সুলভ আচরণ করা। ক্রিকেট আইনের ৪১.১৬ ধারা বলছে, বোলার বল করার আগে নন-স্ট্রাইকার প্রান্তের ব্যাটসম্যান যদি ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে থাকেন তাহলে বোলার তাঁকে রান আউট করতেই পারেন।

সেক্ষেত্রে, এখন সকলে কেন অশ্বিনকে আক্রমণ করে চলেছে?

body_032719095530.jpgআইপিএলে মানকাডিং-এর প্রথম শিকার জোস বাটলার [সৌজন্যে: টুইটার]

হটাৎ করেই, ফেয়ার প্লে ও অশ্বিন কীভাবে খেলাটির সম্মান রক্ষা করতে পারতেন তা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু অশ্বিন তো বেআইনি কিছুই করেননি। এমনকি তিনি এমন কিছুও করেননি যা ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার হয়েছে। বাটলার নিজেই এর আগে মার্কডিং আউট হয়েছে। ২০১৪ সাল এজবাস্টনে শ্রীলঙ্কার বোলার সচিত্র সেনানায়ক তাঁকে এইভাবে আউট করেছিলেন।

কিন্তু তর্ক চলতেই থাকছে। সোশ্যাল মিডিয়াও দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন আবার মোরাল পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে অশ্বিনের কীরূপ ব্যবহার করা উচিত তা নিয়ে জ্ঞান দিতে শুরু করে দিয়েছেন।

একবার ভেবে দেখুন, কে এই বিষয়ে নিয়ে কথা বলছেন। মাঠের মধ্যে তিনি যে সমস্ত বিতর্কগুলোর সৃষ্টি করেছিলেন সেগুলো এবার মনে করিয়ে দেওয়ার সময়ে এসেছে। তিনি হটাৎ করেই অশ্বিনের মানকাডিং দেখে জেগে উঠেছেন। তাঁর হটাৎ করেই মনে পড়েছে যে তিনি রাজস্থান রয়্যালসের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার।

কোহলিকে যদি বেন স্টোকস একই ভাবে আউট করতেন, তাহলে কি সবাই চুপ থাকতে পারতেন?

নিয়ম সকলের ক্ষেত্রেই এক। শেন ওয়ার্ন, আপনি জেগে উঠুন। আইপিএলের লড়াই সর্বদাই 'ফেয়ার' হয়ে থাকে। প্রত্যেকেই চান মাঠে নেমে লড়াইটা জিততে। কেকেআরের থিম সংটা কি ভুলে গেছেন, "করব, লড়ব, জিতব রে"?

একজন অসাধারণ বোলার ও পাঞ্জাবের অধিনায়ক হিসেবে অশ্বিনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো মানে হয় না। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী তিনি কাজ করেছেন। জোস বাটলার যে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছিলেন তা আঁচ করতে পেরে তিনি যথেষ্ট বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন।

তাই তাঁকে ফাঁসি কাঠে ঝোলাবার কোনও মানে হয় না।

আইপিএল জয়টাই শেষ কথা। বাকি সবই নগন্য।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUCHARITA SEN SUCHARITA SEN @twittswitch

Associate Editor, ITGD

Comment