ভুতুড়ে ভানগড়, যে দুর্গে রয়েছে কালাজাদু
ভানগড়ের একটি অতীত রয়েছে, যা এখনও আপনার আসে পাশে হেঁটে বেড়ায়
- Total Shares
সপ্তদশ শতাব্দীতে তৈরি হওয়া রাজস্থানের ভানগড় দুর্গ ভারতের ভুতুড়ে স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। যাঁরা ভূতে বিশ্বাস করেন না তাঁরাও ভানগড়ে ভূত নেই বলতে গিয়ে বেশ অস্বস্তিতেই থাকেন বলে মনে হয়।
আমার দু'দুবার এই দুর্গে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। সত্যি, এই জায়গাতে পা রাখলে মনটা যেন মায়াজালে জড়িয়ে সেখানেই আটকা পড়ে যায়। জায়গাটির একটি ইতিহাস আছে। আর সেই ইতিহাস যেন এখনও জীবন্ত রয়েছে। যাঁরা সেই ইতিহাসে বিশ্বাস করেন তাঁদের পাশেপাশেই যেন সেই ইতিহাস হেঁটে বেড়ায়।
এখানে অতীত আপনার পাশাপাশি চলে [সৌজন্যে: উইকিমিডিয়া কমন্স]
চোখের জলের কুয়ো
মূল দুর্গের ঠিক বাইরে একটি কুয়ো রয়েছে। কুয়োর জল বহু দিন আগেই শুকিয়ে গিয়েছে। কুয়োর গোলাকৃতির বিশাল মুখটিকে ঘিরে রয়েছে পাথরের তৈরি একটি দেওয়াল।
এর কয়েককদম দূরেই দুর্গের দেওয়াল। মধ্যবর্তী জায়গা জুড়ে বেশ কয়েকটি প্রাচীন গাছ। সেই গাছের ডালের ছায়া অদ্ভুত ভাবে কুয়োর অদূরে এসে আর কুয়ো অবাধি পৌঁছায় না।
কুয়োর অন্যদিকে, খানিকটা দূরেই রয়েছে সোমেশ্বর মন্দির।
স্থানীয় লোকগাথায় বলা হয় যে একটা সময় প্রচুর লোক এই কুয়োতে দেহত্যাগ করেছেন। কথিত আছে, শাসকরা যাঁদের পছন্দ করতেন না বা যাঁদের হাত থেকে মুক্তি প্রার্থনা করতেন তাঁদেরকে ভানগড়ে নিয়ে এসে দুর্গ ও তার আশপাশের গোলকধাঁধার মধ্যে রেখে যেতেন।
ভানগড় মানেই ক্ষমতা ও জাদুর মেলবন্ধন [সৌজন্যে: উইকিমিডিয়া কমন্স]
রাত নামলেই এই সব লোকজন 'নিখোঁজ' হয়ে যেতেন। মনে করা হত এই সব অপছন্দের লোকজনকে পিছমোড়া করে এই কুয়োতে ফেলে দিয়ে কুয়োর মাথাটা লোহার পাত দিয়ে ঢেকে দেওয়া হত।
এখনও দিনের বেলায় এই জায়গাতে গেলে এই কুয়ো আপনাকে চুম্বকের মতো নিজের দিকে টানবে। কুয়োর আশপাশে কোনও খাড়াই নেই তা সত্ত্বেও কোনও এক মহাকর্ষ শক্তি যেন আপনাকে কুয়োর দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অনেকেই নাকি কুয়োর সামনে পৌছিয়ে অসুস্থ বোধ করেন এবং অজান্তেই কুয়োর কার্নিসে বসে পড়েন।
মনে হয়, কয়েক শতাব্দী পরেও এই অন্ধকারছন্ন কুয়ো এখনও টাটকা রক্তের স্বাদ পেতে মরিয়া।
কালাজাদু
দুর্গের ভিতরে প্রবেশ করলে একটি আশ্চর্য জিনিসের সম্মুখীন হতে হবে। কেউই নিশ্চিত নন যে এই জিনিসটি ক'দিন ধরে সেখানে রয়েছে। তবে এক ঝলক দেখলেই বোঝা যায় দুর্গ তৈরির সময়ে এ জিনিষটা ছিল না। আমার মতে ভানগড় যাদের যাদের দখলে ছিল তাদেরই কেউ এই জিনিসতা তৈরি করেছিল, ক্ষমতার অপব্যবহার করতে।
অনেকগুলো পাথরের উপর বেশ কয়েকটি বড় গোলাকৃতির দাগ কাটা। যাঁরা এই বিষয়গুলো নিয়ে চর্চা করে থাকেন তাঁরা এই গোলাকৃতির চিহ্নগুলোর থেকে দূরেই থাকেন। কারণ এই চিহ্নগুলোর ব্যববহার এখনও রয়েছে - একজনের দুর্ভাগ্য অন্যজনের দিকে 'ঠেলে' দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
ভানগড়ের কালাজাদু আজও বিরাজ করে [সৌজন্যে: উইকিমিডিয়া কমন্স]
ধরে নেওয়া যায় এই ধরণের চিহ্ন যিনি করেন তিনি নিজেই খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে চলছেন। এবং তিনি বা তাঁরা বিশ্বাস করেন যে কোনও দর্শনার্থী যদি ভুল করে বা কৌতূহলবশে এই চিহ্নের উপর হাত লাগিয়ে দেন তাহলে তাঁর বা তাঁদের দুর্ভাগ্য সেই দর্শনার্থী 'লাভ' করবেন।
এ জিনিস তো আমাদের আশপাশেও হয়ে থাকে। চৌরাস্তার মোড়ে জল ভর্তি মাটির হাঁড়ি রেখে অপেক্ষা করা হয় কখন কে এসে এই হাঁড়িটিকে ধাক্কা মারবেন। হাড়ি ধাক্কা খাওয়া মানে যিনি রেখেছেন তাঁর খারাপ সময়ের অবসান আর যিনি ধাক্কা মেরেছেন তাঁর খারাপ সময়ের শুরু।
ভানগড় মানেই ক্ষমতা। ভানগড় মানেই জাদু। অনেকেই এখানে আদ্যিকালের ক্ষমতার খোঁজ করেন। আমার মতে এই দুর্গে একপ্রকার মায়াবী জাদু রয়েছে আর এই জাদুই এই দুর্গের মূল ক্ষমতা।
মাঝে মাঝেই মনে হয় ভানগড়ের অলৌকিক গল্প কি সত্যিই কুসংস্কার, নাকি অন্য কিছু? উত্তর হয়তো কেউই দিতে পারবেন না। তবে একটা কথা বলতে পারি - কালো এবং আলোকময় - দু'ধরনের জাদুই এখনও ভানগড়ে বিরাজমান।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে