অবশেষে আদালতের রায়, ডাক্তারি পড়ুয়াদের টিআর-এর জট কাটল
ডাক্তারদের টিআর থেকে বঞ্চনার উপযুক্ত জবাব হল এই রায়
- Total Shares
রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের ট্রেনি রিজার্ভ (টিআর) সংক্রান্ত মামলায় আজ রায় ঘোষণা করে জানিয়েছে যে স্বাস্থ্য দপ্তর যে ভাবে শুধুমাত্র ১৮০ জনকে টিআর দেওয়ার কথা বলেছিল তা অপরিমাণদর্শিতা, স্বৈরাচারিতা ও আইনবিরুদ্ধতার নামান্তর। স্বাস্থ্য দপ্তরের এই সংক্রান্ত সবক'টি বিজ্ঞপ্তিকেই বাতিল করা হল এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী টিআর পাওয়ার কথা মোট ৩৪৮ জনের। সকলকেই দু'সপ্তাহের মধ্যে টিআর দিয়ে ছেড়ে দিতে হবে।"
বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগ এবং বিচারপতি সুবেশ দাসের এজলাসে মামলাটির শুনানি হয়।
এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন "এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। বছরের পর বছর স্বাস্থ্য ভবন যেভাবে যোগ্য ডাক্তারদের টিআর থেকে বঞ্চিত করে আসছিল, এই রায় তার যোগ্যতম জবাব দেবে।"
স্বাস্থ্যভবনে জমা দেওয়া হয়েছিল স্মারকলিপি
এ বছর নিট-পিজি পাশ করা সত্ত্বেও এবং এঁরা তিন বছরেরও বেশি সময় গ্রামীণ হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়া সত্বেও অনৈতিক ভাবে গায়ের জোরে স্বাস্থ্য দপ্তর প্রথমে ১৮০ জন তারপর ১৯৬ জনের বাইরে বাকি ১৬৮ জনকে টিআর থেকে বঞ্চিত করেছিল। এর ফলে রাজ্যজুড়ে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসকদের পদ ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও নতুন চিকিৎসকরা চাকরিতে যোগ দিচ্ছিলেন না।
সুতরাং এই রায় গ্রামের মানুষের চিকিৎসাকেও সুচিন্তিত ও নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে কারণ টিআর-এর অধিকার পেলে নতুন চিকিৎসকরা চাকরিতে যোগ দেবেন। সরকারের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী টিআর নিয়ে যাঁরা এমডি ও এমএস পড়তে যাচ্ছেন পাশ করার পর তাঁরাই ফিরে এসে গ্রামের মানুষকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে আরও উন্নত পরিষেবা দেবেন। তাই এই রায়ের ফলে গ্রামের মানুষ অনেক বেশি উপকৃত হবেন।
সরকারি চাকুরিরত যোগ্য প্রার্থীদের এই টিআর ব্যবস্থা, শহরের জনস্বাস্থ্য, স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত চাকরির ব্যবস্থা, চাকরিতে বদলি ও পদোন্নতি, কর্মক্ষত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা, সরকারি চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার মতো বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে বারবার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন ডা. বিশ্বাস, তাই তার মাসুল হিসাবে হঠাৎই তাঁকে বাঁকুড়াতে বদলি করে দেওয়া হয়।
সন্ত্রাসমুক্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি নিয়ে বেশ অনেকদিন ধরেই আন্দোলন চালাচ্ছে চিকিৎসক ও ডাক্তারির পড়ুয়ারা
এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সভাপতি চিকিৎসক প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সরকার একদিকে মুখে বলছেন গ্রামের মানুষের চিকিৎসার জন্য তারা সবকিছু করছেন অথচ টিআর থেকে যোগ্য ডাক্তারদের বঞ্চিত করে গ্রামীন চিকিৎসার ভিতকেই ভেঙে দিতে চাইছেন। এই রায় তার উপযুক্ত জবাব এবং গ্রামের মানুষের চিকিৎসা নিয়ে সরকারের দ্বিচারিতা কে সামনে তুলে এনেছে।"
ডিপ্লোমার ক্ষেত্রে দু'বছর এবং ডিগ্রির ক্ষেত্রে তিন বছর সবেতন পড়ার সুযোগ যাঁরা পান তাঁদের ট্রেনি রিজার্ভ বলা হয়। ২০১৬ সালের আগে যে সমস্ত চাকুরিরত প্রার্থী এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেন, তাঁদের প্রায় সকলেই এই সুযোগ পেতেন। অল্প কয়েকটি আসন ফাঁকা থাকলে সেখানে ওপেন ক্যান্ডিডেটরা ভর্তি হতেন। যাঁরা এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেন (চাকুরিরতদের) এই সংখ্যাটা তিনশোর কাছাকাছি বা কখনও তারও বেশি হত। কিন্তু ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বাস্থ্য ভবনের এক নির্দেশিকায় বলা হয়, চাকরিরত চিকিৎসকদের মাত্র ১০ শতাংশ পড়ার সুযোগ পাবেন। গত দু’বছর ধরে সেই হিসাবে সংখ্যাটা তিনশো থেকে কমিয়ে আনা হল ১৯০-এর কাছাকাছি। তারপর থেকে এই ধারাই চলে আসছে। এ বছর সংখ্যাটা ১৮০।

