আইন আছে, মামলাও রুজু করা হয়, কিন্তু অপরাধীরা সাজা পায় না

মানুষ নয়, কুকুরছানা খুন হয়েছে; তাই মামলা রুজু করার ৪৮ ঘণ্টা পরেও কেউ গ্রেফতার হয়নি

 |  3-minute read |   15-01-2019
  • Total Shares

ধরুন, কারুর উপরে আপনার ব্যক্তিগত আক্রোশ রয়েছে। তাঁকে খুন করা তো দূর অস্ত্, তাঁর গায়ে হাত তুলতেও আপনি দু'বার ভাববেন। কারণ, খুন করাটা মোটেও সহজ নয়। তার চেয়েও বড় কারণ, আপনি জানেন ওই ব্যক্তির গায়ে শুধুমাত্র হাত তুললেও তার পরিনাম কী ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। ওই ব্যক্তি থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করতে পারে। সাজা না পেলেও, প্রাথমিক ভাবে পুলিশি কিংবা জেল হেফাজতও হতে পারে।

আর, খুন করলে তো কোনও কথাই নেই। দোষী সাব্যস্ত হলে জেলের ঘানি টানতে হবে।

অথচ দেখুন কী অবলীলায় কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতাল চত্ত্বরে ১৬টি কুকুর ছানাকে পিটিয়ে মারা হল। অভিযোগের তির সেই হাসপাতালের শিক্ষানবিশ নার্সদের দিকে। তাঁরাই নাকি এই কুকুরছানাগুলোকে পিটিয়ে মেরেছেন। দুই মহিলা একটি কুকুরছানাকে বেধড়ক লাঠিপেটা করছেন এমন একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টও বলেছে, কুকুরছানাগুলোকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে।

মানবিকতা বাদ দিলাম। এহেন নৃশংস কাণ্ড যাঁরা ঘটালেন তাঁরা এই কাজটি করার আগে একেবারে জন্যও কি চিন্তা করেছিলেন যে এর পরিণাম কী হতে পারে। তাঁরা কি একটিবারের জন্যও ভয় পেয়েছিলেন। অনেকেই বলছেন সচেতনতার অভাবের জন্য এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। একেবারেই ভুল ব্যাখ্যা। অপরাধীরা নির্দ্বিধায় তাঁদের কাজ করেছেন, কারণ তাঁরা ভয় পাননি।

body_011519125948.jpgএনআরএস হাসপাতালের ঘটনা শুধু মর্মান্তিক নয়, ভয়াবহও [স্ক্রিনগ্র্যাব]

খামোকা ভয় পাবেনই বা কেন? এই ধরণের ঘটনায় যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনও নিদর্শন নেই। ১৬টি কুকুরছানা খুন হয়েছে বলে আজ হৈচৈ হচ্ছে। কিন্তু, যদি একটি কী দুটি কুকুকরছানা খুন হত তাহলে কোনও আলোড়নই হত না। এখন সংবাদপত্রগুলো এক হয় প্রথম পাতায় কিংবা ভিতরের পাতায় বড় করে এই ঘটনাটি সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করছে। কিন্তু, একটি কী দু'টি কুকুরছানা খুন হলে এই খবর ছোট করেও প্রকাশিত হত কিনা সে বিষয় যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

এই সংক্রান্ত মামলায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনও নিদর্শন নেই বললেও অর্ধসত্য বলা হবে। সত্যি কথা লিখতে গেলে লিখতে হয় কোনও রকমের শাস্তির কোনও নিদর্শন নেই। আইন আছে। ক্ষেত্র বিশেষে আইনানুযায়ী মামলা রুজু করা হয়। কিন্তু আইনকে কার্যকর করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না। 'মানুষ তো মরেনি, মরেছে কুকুর' -- সে ক্ষেত্রে খামোকা কেন এত খাটতে যাব - আইনরক্ষকদের চিন্তাভাবনা কতকটা এই পথেই চলে।

কলকাতার সরকারি হাসপাতাল চত্ত্বরে ১৬টি কুকুরছানার খুনের ঘটনায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২৯ (৫০ টাকা বা তার বেশি মূল্যের পশুকে আহত বা মেরে ফেলা), ২০১ (প্রমাণ লোপাট) এবং প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েল্টি টু অ্যানিম্যালস অ্যাক্ট ১৯৬০-এর ১১এল ধারায় মামলাটি রুজু করা হয়েছে।

তাই বলে অবশ্য পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা বা কাজ না করার ইচ্ছে নিয়ে কোনও প্রশ্নের অবকাশ নেই। মামলাটি রবিবার রুজু করা হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর অবধি কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি।

মামলা রুজু করার পর প্রায় ৪৮ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে, তারপরও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করছে না কেন? হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে, যে ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়েছে সেই ভিডিয়োটিও রয়েছে। তা হলে, পুলিশ আর কী কী প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করছে?

body1_011519010124.jpgঅত্যাচার হয়েছে কুকুরের উপর, তাই কারও কোনও হেলদোল নেই [ছবি: রয়টার্স]

মামলায় উল্লেখিত ধারাগুলোতে সর্বোচ্চ দু' থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত হাজতবাস হতে পারে। কিন্তু হাজতবাস তো দূর অস্ত্ এই মামলায় গ্রেফতারের কোনও উদ্যোগ এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি।

এই মামলার ভয়াবহতা প্রশ্নাতীত। উপযুক্ত প্রমাণও হাতের যাচ্ছে উপস্থিত ছিল। সব মিলিয়ে, অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার রাস্তা পুলিশের সামনে খোলা ছিল। এই মামলাকে সামনে রেখে পরবর্তী কালে এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি অনেকখানি রোধ করা যেত। কিন্তু সেই সুযোগ সদ্ব্যবহার করতে কেউই আগ্রহ প্রকাশ করছে না।

হাজার হোক, মৃতরা শিশু বা মানুষ নয়। তারা যে কুকুরছানা।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ARPIT BASU ARPIT BASU @virusfound007

Arpit Basu is the Special Correspondent with the India Today Group’s fact check team. With more than one-and-a-half decade's experience in print and digital media, he has reported on aviation, transport, crime, civic and human interests issues. His sting operation on how precious Aviation Turbine Fuel, meant for Kolkata airport, was pilfered and sold in local market as ‘white kerosene’ received widespread acclaim. Arpit has worked with reputed media houses like The Times of India and Hindustan Times and had received letter of appreciation for reporting during the Phalin cyclone in Odisha in 2013.

Comment